মাহমুদ ফারুক, ৯ এপ্রিল: লক্ষ্মীপুর জেলাবাসী অভিনব এক লকডাউন কৌশল আবিস্কার করেছেন। নিজেরাই জনগনের চলাচলের রাস্তার দুইপাশে বাঁশ ও কাঁটার বেড়া দিয়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ও সংক্রমনরোধে চেষ্টা চালানোর চেষ্টা করলেও স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ীরা চা দোকান, সেলুন খুলে বসেছেন।
সেসব দোকানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে আড্ডাবাজিসহ নানান অপকর্ম। এছাড়াও শহরের বাহিরে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বাড়ীঘরে খোলা হয়েছে অস্থায়ী চা দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে গত দুইদিন থেকে জেলার ৫টি উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৌশলের মূল বিষয়বস্তু বুঝতে পেরে জেলার বিভিন্ন থানা ও উপজেলা প্রশাসন রাস্তার উপর থেকে বেশ কয়েকটি বাঁশ ও কাঁটার বেড়াসহ প্রতিবন্ধকতা তুলে দিয়ে জনগনের চলাচল স্বাভাবিক করে দিচ্ছেন।
আহম্মেদ ফয়সাল নামের এক সমাজকর্মী জানান, গ্রামের মানুষ নিজেকে ফাঁকি দিচ্ছে-না প্রশাসনকে ফাঁকি দিচ্ছে? গ্রামের এক শ্রেণীর উৎসাহী যুবক নিজের গ্রামকে সুরক্ষিত করতে গিয়ে গ্রামের মূল সড়কের উপর বাঁশ-কাঁটা ও ইট দিয়ে বেড়া দিচ্ছে। অপরদিকে এক শ্রেণীর মানুষ প্রতিবন্ধকতার ভিতরে দোকান খুলে বসেছে। সেখানে দিব্বি আরামে চা-সিগারেটের দোকান, কেউ কেউ আবার সেলুন সাজিয়ে বসেছে। সন্ধার পর থেকে দোকানগুলোতে শত শত মানুষের ভীড়।
চাঁদপুর সরকারী কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রায়হানুর রহমান জানান, এরা রাস্তায় বেড়া দিচ্ছে মূলত নির্বিঘ্নে চা দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে । পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যেন বাঁশের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। গ্রামের ভিতরে সব বাড়ীতেই এখন চা-পান-সিগারেটের দোকান।
প্রকৌশলী লোকমান হোসেন জানান, গ্রামবাসী যেভাবে মূল সড়কের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাতে করে কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস, রোগী বহনে অ্যাম্বুলেন্স আসা যাওয়া করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। অতিদ্রুত এসব বেড়া খুলে ফেলা দরকার।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকার রাস্তার উপর স্থানীয়দের তৈরিকৃত বাঁশের বেড়া খুলে ফেলছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশদের অনুরোধ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনভাবেই বাড়াবাড়ি বরদাস্ত করা হবে না। সরকারী নিদের্শনা না মানলে তালিকা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, বিভিন্ন বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিকে এ ব্যপারে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে টীম করে এলাকার সমস্যা নির্ধারন করে উপজেলা প্রশাসনকে জানাতে হবে। আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। বেড়া দিয়ে ভিতরের শাখা সড়কগুলোর পাশে দোকানপাট খোলা রাখা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন আরো কঠোর হতে বাধ্য হবে। আর কিছু স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনসহ এক শ্রেণীর উৎসাহী মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছে, তা মোটেও ঠিক নয়। স্থানীয় সচেতন মানুষকে এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে। অতিউৎসাহী হয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো যাবে না।