রাজিব হোসেন রাজু ও ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, ১৮ এপ্রিল:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বৃদ্ধা মাহফুজাকে (৫৫) হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দিয়ে লাশের সাথে থাকা স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনায় প্রেমিক যুগলসহ আটক হয়েছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক তিন কিশোর কিশোরী।
রায়পুর থানার ওসি (তদন্ত) শিপন বড়ূয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ পিবিআই’র তদন্ত শেষে মাহফুজা হত্যার সাথে জড়িত ৩ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন, আসমা আক্তার (১৭), প্রেমিক ইমন হোসেন (১৭) ও আজিজ (১২)। আজিজ ছিলেন আসমা ও ইমনের প্রেমের বার্তা বাহক।
২০১৯ইং সনের ১৭ অক্টোবর পুলিশ মাহফুজার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে কেরোয়া ইউনিয়নের একটি খাল থেকে।
শুক্রবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. জহিরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পিবিআই নোয়াখালী সূত্রে জানায়, ২০১৯ইং সনের ১৭ অক্টোবর রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের বৃদ্ধা মাহফুজার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ১৬ অক্টোবর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। হত্যাকান্ডের ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সন্দেহভাজন ইমন হোসেন ও আজিজ নামে দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী পিবিআই জানান, ইমন ও আসমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আজিজ তাদের প্রেমের চিঠি আদান প্রদানে সহযোগীতা করতো। একদিন আসমা ও ইমন পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ইমনের কাছে টাকা না থাকায় আসমা আক্তার বৃদ্ধা মাহফুজাকে হত্যা করে স্বর্ণালংকার লুটে নেওয়ার জন্য ইমনকে বলে। পরে তারা দুইজনই পালিয়ে বিয়ে করবে। এই পরিকল্পনার দুইদিন পর ইমন ও আজিজ বৃদ্ধা মাহফুজার বাড়ির পাশে ওঁৎ পেতে থাকে। প্রতিদিন বিকেলেই মাহফুজা বেগম হাঁটতে বের হতো।
ঘটনার দিন হাঁটতে বের হলে প্রেমিক ইমন হোসেন বৃদ্ধা মাহফুজাকে তাদের ঘরে ডেকে নেয়। একপর্যায়ে ইমন ও আজিজ তার গলায় গামছা পেঁছিয়ে হত্যা করে লাশের সাথে থাকা সোনার চেইন ও কানের দুল খুলে নেয়। পরে বস্তাবন্দি করে বৃদ্ধার লাশ ইমন তার বাড়ির রান্না ঘরের পেছনের বাগানে ফেলে দেয়। বৃদ্ধার ছেলেরা খোঁজাখুজি শুরু করলে ইমন ও আজিজ পরিকল্পিতভাবে লাশটি বস্তায় ভরে পাশর্^বর্তি খালে ফেলে দেয়। পরে পুলিশ বস্তা টেনে নেওয়ার চিহ্ন দেখে খাল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
নিহত বৃদ্ধার ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোঃ আবদুল ওয়াদুদ শিপন বলেন, আমার মায়ের হত্যাকান্ডে কোন অগ্রগতি না পেয়ে আমি মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য পুলিশ হেডকোয়াটারে আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা তদন্তের জন্য পিবিআই নোয়াখালীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আমাদের বাড়ির বাড়ির লোকজন এবং পিবিআই এর সহযোগিতায় আজ আমার মায়ের হত্যার রহস্য উদঘাটন হলো। আমি পিবিআইসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই এবং এ পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করি।
পিবিআই নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা বলেন, আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় মামলাটির রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামীরা শিশু হওয়ায় লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।