মাহমুদ ফারুক, ২০ এপ্রিল: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এক গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনায় ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। শশুর বাড়ীর লোকজনসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী ঐ গৃহবধু (৩২) জ্বর সর্দিতে শারিরীকভাবে অসুস্থ্য হলে পাশ্ববর্তি শাহরাস্তি উপজেলার লোটরা গ্রামের বাবার বাড়ীর লোকজন গৃহবধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা বন্ধ স্বাক্ষাত বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ সোমবার সকালে শশুর বাড়ী রামগঞ্জ উপজেলার আশারকোটা গ্রামে মৃত্যুবরন করেন।
এছাড়া একইদিন সকালে রামগঞ্জ পৌর ৫নম্বর ওয়ার্ড নন্দনপুর গ্রামের কুরি বাড়ীতে অবস্থানরত কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মোঃ হোসেন মিয়া (৫৫)সহ গৃহবধুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ঐ গৃহবধুর গ্রামের বাড়ী পাশ্ববর্তি শাহরাস্তি উপজেলার লোটরা গ্রামে। স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন চট্টগ্রামে। গত কয়েকদিন আগে বাবার বাড়ীতে তিনি জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হন। জ্বর সর্দি ও কাশি করোনা ভাইরাসের উপসর্গ বলে বাবার বাড়ীর লোকজন এসময় তাকে এড়িয়ে চলেন। রাগে অভিমানে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে তিনি শনিবার স্বামীর বাড়ী রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আশারকোটা গ্রামে চলে আসেন। চট্টগ্রামে অবস্থানরত শ্রমিক স্বামীর হাতেও ছিলো না কোন টাকা পয়সা। স্বামীর বাড়ীতে এসেও তিনি চিকিৎসা করাতে পারেননি। গত কয়েকদিন পূর্বে একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন থেকে গৃহবধুর পরিবারের জন্য খাবারও পাঠানো হয়। আজ সোমবার সকালে হটাৎ ঐ গৃহবধুর মৃত্যুতে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়।
পানিয়ালা গ্রামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক জানান, গৃহবধুর বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। গত ৪/৫দিন আগে আমাকে কল করে জানান, ঘরে খাবার নেই। স্বামীও বর্তমানে বেকার। ঔষধ কেনার টাকা পয়সাও নেই। আমরা স্থানীয় একটি সংগঠনের মাধ্যমে তার ঘরে খাবার ব্যবস্থা করেছি। তিনি ভয় ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলেও দাবী করেন এ স্কুল শিক্ষক।
পৌর নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেন জানান, এখন স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়েও মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ হোসেন মিয়া স্বপরিবারে শশুরবাড়ী নন্দনপুর গ্রামের ওমর আলী মুন্সী বাড়ী (কুরীবাড়ী) বসবাস করতেন। মোঃ হোসেন মিয়া দীর্ঘদিন থেকে কিডনীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। আজ সোমবার তিনি নোয়াখালী থেকে কিডনী ডায়ালাইসিস করে শশুরবাড়ী ফেরার পথে গাড়ীতে মারা যান।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ গিয়াস উদ্দিন ভূইয়া মানিক জানান, উক্ত গৃহবধুসহ রামগঞ্জ পৌর শহরের নন্দনপুর কুরী বাড়ীতে কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় দুইজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, উভয়স্থানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরকে বিষয়টি অবগত হয়ে লকডাউনের পদক্ষেপ গ্রহন করতে বলা হয়েছে।