মাহমুদ ফারুক, ২৯ এপ্রিল:
করোনা ভাইরাসের মহামারির ছোবলে সারাদেশের মত লক্ষ্মীপুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলার প্রায় চারশ’টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল (কেজি স্কুল)। জেলার পাঁচশ’টি বেসরকারী ও কেজি স্কুলের প্রায় ৬হাজার জন শিক্ষক কর্মচারীদের দুর্ভোগ বেড়েছে লকডাউনের কারনে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার বিভিন্ন এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষকরাও।
লক্ষ্মীপুর জেলায় চারশ’টি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন ছয় হাজারের বেশী শিক্ষক। সরকারি শিক্ষা কারিকুলাম ও সরকারি সকল জরিপে অংশগ্রহণ পূর্বক লক্ষ্মীপুরের কেজি স্কুলগুলোতে পাঠদান করা হয়।
শিক্ষার মান, বার্ষিক ও প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষার ফলাফল ভালো হওয়ায় অনেক বাবা মা তার সন্তানদের কেজি স্কুলে ভর্তি করান। ভাবেন, কেজি স্কুলের শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিকতায় তার সন্তানকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে সরকারি নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাসিক সম্মানীও বন্ধ রয়েছে বিগত দুই মাস। আর কতদিন বন্ধ থাকবে সে নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার রাজশাহী বিভাগের সরকারী র্কমর্কতাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনে সেপ্টেম্বর স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার সম্ভাবনা জানিয়ে বক্তব্য রাখলে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাঝে আতঙ্ক নতুন রূপ দিয়েছে।
জেলার একটি কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষক আবুল কালাম জানান, দুই ভাই বোন নিয়ে শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন তিনি। একটি স্কুলে শিক্ষকতা আর ৩টি টিউশনি করে সংসার চলে তার। এখন স্কুল বন্ধ, টিউশনি বন্ধ। গত দুই মাস বাসা ভাড়া দেয়া সম্ভব হয়নি। সংসার কিভাবে চলবে। হাতে কিছু টাকা ছিলো তা দিয়ে চলছে এতদিন। সামনে কবে স্কুল খুলবে তার কোন নির্দেশনা নেই। টিউশনি বন্ধ, কি হবে আমাদের। বাসা ছেড়ে দিলে থাকবো কোথায়। আর খাবো কি?
প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সবুজ জানান, আমরা খুব বেকায়দায় আছি। আমাদের স্কুলগুলো চলে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি দিয়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা মাসিক বেতন আদায় করতে পারছি না। অন্যদিকে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকদেরকে বেতন দিতে পারছি না ২ মাস ধরে। সম্মানিত শিক্ষকরা লাইনে দাঁড়িয়ে অন্য অসহায় মানুষগুলোর মতো ত্রানও নিতে পারছে না। আবার অনেকে বাসা ভাড়া ও দিতে পারছেন না।
তিনি দাবি করেন, সরকার জাতি গড়ার এই কারিগরদের জন্য দ্রুত প্রনোদনার ব্যবস্থা না করলে না খেয়ে মরতে হতে পারে কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ করছি করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কাউকে কিছু বলতে পারছেন না, হাত পেতে চাইতে পারেন না।