হাসান মাহমুদ, ১ মে: করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর-রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষ জেলে নেমেছেন ইলিশ মাছ শিকারে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা সংরক্ষণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। সারাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব এড়াতে লকডাউন থাকলেও জেলেদের বেলায় সরকারী কোন বিধি নিষেধ না থাকায় প্রতিটি নৌকায় ১০থেকে ১৫জন জেলে নিয়ে মাছ ধরতে নদীর গভীরতায় যাচ্ছেন তারা। বিশাল এই জনগোষ্ঠির রয়েছে করোনা ঝুঁকি। প্রতিটি নৌকায় বিভিন্ন পরিবারের সদস্য রয়েছে।
নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও করোনা ভাইরাসের এ সময়ে মাছ শিকারে যেতে সরকারের বাড়তি কোন নির্দেশনা নেই। যেহেতু বাজারে মাছ উঠছে, হাট বসছে ও বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ সরবরাহ হচ্ছে, সেজন্য জেলেদেরও নদীতে নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
কিন্তু নদীতে একই নৌকাতে অনেক জেলেকে থাকতে হয়, এতে করোনা ঝুঁকি রয়েছে বলে জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর থেকে রক্ষা পেতে জেলেদেরকে সচেতনতা বজায় রেখে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
জানা গেছে, জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার মৎস্যজীবি রয়েছে। তবে সরকারি হিসেবে এ জেলায় ৪৭ হাজার ৭৭১ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় মাত্র ২৪ হাজার ২৪৭ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যাক জেলে বঞ্চিত হচ্ছেন খাদ্য সহায়তা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা রক্ষায় চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১শ কিলোমিটার এলাকায় মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এসময় জেলেরা নদীতে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। আর অবসর সময়ে তারা নৌকা মেরামত, জাল বোনা ও ছেঁড়া জাল তুনে নিয়েছেন।
তবে সুযোগ পেয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামে কিছু অসাধু জেলে। এর মধ্য আটক ৪৬ জন জেলেকে কারাদন্ড ও অন্য আটকদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এনিয়ে গত দুই মাসে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৯২ টি মামলা করেছে মৎস্য বিভাগ। জব্দকৃত ১৫ লাখ মিটার জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। জব্দকৃত ১০ মেট্টিক টন জাটকা স্থানীয় অসহায়, এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও আগামি ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকার করা যাবে না বলেও জানানো হয় জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে। জাটকা রক্ষায় প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে করোনা ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামার কারণ জানতে চাইলে মজু চৌধুরী হাট মাছঘাঁটের জেলে শফিক উল্যা ও মোরশেদ মাঝি জানায়, গত দুই মাস তারা নদীতে যায়নি। বাড়তি কোন আয়ও নেই তাদের। ধার দেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। করোনাতে ঝুঁকি হলেও তারা পেটের দায়ে নদীতে নেমেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে জেলেরা। করোনা ঝুঁকি থাকলেও এনিয়ে সরকারের কোন নির্দেশনা না থাকায় আমরা আপাতত কিছু করতে পারছি না।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গফফার বলেন, কোন জেলের কাশি-জ¦র-সর্দিসহ করোনা উপসর্গ থাকলে তাকে অন্যদের সঙ্গে নদীতে নেওয়া পরিহার করতে হবে। ইলিশের মৌসুমে একসঙ্গে অবস্থান করতে হলেও নিজেদের সাধ্যমত সচেতন থাকতে হবে। আর যেসব জেলেদের বাড়ির পাশে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গের রোগী আছে তাদেরকে নদীতে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।