রেদোয়ান সালেহীন নাঈম, ১৬ জানুয়ারী: বর্ষার পানি শুকানোর শুরু থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও ফসলী জমি কেটে পুকুর খননের উৎসবে মেতেছে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা জুড়ে। আর খননকৃত পুকুরের মাটি চলে যাচ্ছে স্থানীয় ইঁভাটাগুলো। এতে করে প্রতিদিনই বাড়ছে পুকুরের সংখ্যা, কমছে ফসলি জমি। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে চলছে কৃষি জমি খননের প্রতিযোগিতা। এদিকে মাটি বহনকৃত ট্রাকের চাকায় ও ট্রাক থেকে মাটি পড়ে সরকারি রাস্তাগুলোরও বেহাল অবস্থা।
সরজমিনে দেখা যায়, ভোলাকোট ইউনিয়ন, ভাটরা ইউনিয়ন, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন, ভাদুর ইউনিয়ন, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি খনন করে মাটি নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় ইটভাটায়। জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে এক শ্রেণীর ভূমিখেকো জমির টপ সয়েল বিক্রি করায় বছরের পর বছর ধানী জমির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কমছে খাদ্য উৎপাদন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধান চাষাবাদের পরিবর্তে কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ার কারণে ফসলী জমি খনন করে মাছ চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছে এ জমির মালিকরা। সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ না থাকায় এসব জমি রক্ষার জন্য প্রশাসন কোনো ভূমিকাই পালন করছে না বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে ফসলি জমি সুরক্ষায় সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবী জানিয়েছেন রামগঞ্জবাসি। অন্যদিকে খাল বিল ও জলধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ব্রীজের মুখে মাটি ফেলে মাছ চাষ ও একের পর নির্মিত হচ্ছে বসত ভিটা। ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর ফসলী জমি। এরপরও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এসবের প্রতিকারে নেই কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার তাঁর বিভিন্ন সভা-সেমিনারে,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে কোন কৃষি জমি খাল-বিল ও জলাধার বন্ধ করা যাবে না। এমনকি সেই কৃষি জমি ও জলাধার ব্যক্তি মালিকানার হলেও কোন প্রকার ক্ষতি সাধিত হোক তাও না।
এদিকে মোটার টাকার চুক্তিতে বা লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে চড়া দামে মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় ইটভাটায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। এসব মাটি বহনের সময় ট্রাকের পেছনের ঢাকনা খোলা থাকায় এবং অতিরিক্ত মাটি ভরাটের কারনে ট্রলির ঝাকুনিতে সদ্য সংস্কারকৃত সড়কে মাটি পড়ে নষ্ট হচ্ছে।। ঘনকুয়াশা বা সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি ভিজে গেলেই যানচলাচলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি পায়ে হাটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। কেউ কেউ এসব মাটি পরিস্কার করতে গিয়ে কোদাল দিয়ে সড়কের পাকা কার্পেটিং তুলে রাস্তাগুলোর ক্ষতিসাধন করছেন কোথাও কোথাও।
জনসম্মুখে এধরনের জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত চলতে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ বলেন, অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দন্ডনিয় অপরাধ। এমনকি ফসলি জমি অধিগ্রহণেও বাধা আছে। ইতোমধ্যে সবকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ফসলী জমিতে পুকুর খননকারীদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। রাস্তা বিনষ্টকারী ট্রলি ও ট্রাকের বিরুদ্ধে শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করবেন বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপ্তি চাকমা বলেন,আমরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো শুরু করেছি আগামী কিছু দিনের মধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। শীঘ্রই এসব ট্রাক-কৃষি জমি বন্ধের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে ।