মাহমুদ ফারুক:
রামগঞ্জ উপজেলাজুড়ে হটাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাধ্য রোগীদের আত্মীয়স্বজন প্রাইভেট, মাইক্রোসহ বিকল্প ব্যবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটে চলছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের হসপিটালগুলোতে।
শহরের ব্যস্ততম সড়ক রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়ক, রামগঞ্জ সোনাইমুড়ি সড়ক ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারী হসপিটালের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় রোগীদের ভীড়। রোগী বহনে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় বেসরকারী হসপিটালের অ্যাম্বুলেন্সহ প্রাইভেট, মাইক্রো গাড়ী। হসপিটালগুলো থেকে রোগী নামানো হচ্ছে। আর রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো রোগী নিয়ে উপজেলার হসপিটালগুলো থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পথে দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে।
অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কটের কারনে রোগীর আত্মীয়স্বজন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকায় মাইক্রো ও প্রাইভেট কারে ঢাকা চট্টগ্রাম কুমিল্লা বা লক্ষ্মীপুর সদর হসপিটালে নিতে হচ্ছে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক পশ্চিম আঙ্গারপাড়া গ্রামের মোঃ শুভ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেছেন, করোনা রোগীরা একের পর সিরিয়াল বেঁধে রামগঞ্জ সরকারী হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। গত ৪দিনে আজকের একজনসহ ৬জনকে স্থানান্তর করেছি ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্বজনহারা হচ্ছেন অনেক পরিবার। ঠিক করে খাওয়া নেই, ঘুম নেই, শরীরটা আর দিচ্ছে না এবার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী জানান, পরীক্ষা করলে সকল মানুষের করোনা পজেটিভ আসবে। বৃহস্পতিবার ৯৩ জনে ৩৯জন পজেটিভ হয়েছে। মূমুর্ষ অবস্থায় কয়েকজনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। আজও এ হসপিটালে (রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) জ¦র সর্দি ও কাঁশিতে আক্রান্ত ৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কিন্তু কাউকে জিজ্ঞাসা করলেও সদুত্তোর পাবেন না।
রসুলপুর গ্রামের কামাল হোসেন ভূইয়া জানান, আমার চাচা কবির হোসেন ভূইয়া (৬৫) গত কয়েকদিন আগে জ¦র সর্দিতে আক্রান্ত হলে উনাকে লক্ষ্মীপুর সদর হসপিটালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। আজ রবিবার (১ আগষ্ট) দুপুর ১২টায় তিনি লক্ষ্মীপুর সদর হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রামগঞ্জ পৌর সোনাপুর গ্রামের মসজিদ আটিয়া বাড়ীর মোঃ জিহান জানান, তার চাচা গোলাম মোস্তফা (৫০) গত তিনদিন থেকে জ¦র সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে আমরা প্রথমে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তার করোনা পজেটিভ আসে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া হলে সেখানে শনিবার (৩১ জুলাই) তার মৃত্যু হয়।
চাকুরীজীবি আরাফাত হোসেন জানান, আমার এক নিকটাত্মীয়ের পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত। কিন্তু চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার কারনে আমরা ঢাকায় উনাদের নিতে বাধ্য হয়েছি। আর প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানতে পারি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুধু মৃত্যুর সংবাদ। মৃত মানুষদের অধিকাংশই করোনা পরীক্ষা করানো হয়নি।
ইছাপুর ইউনিয়নের নুনিয়াপাড়া গ্রামের সালেহা বেগম জানান, আমার স্বামীকে গত কয়েকদিন আগে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়েছি ৮হাজার টাকা ভাড়ায়। গত শনিবার একই হসপিটালে আবার নিতে চাইলে অ্যাম্বুলেন্স চালক ১১হাজার টাকার কমে নিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে মাইক্রোতে করে ঢাকায় নিয়ে গেছি ৯ হাজার টাকায়।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার এক আওয়ামীলীগ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, সরকারী হসপিটালে শুধুমাত্র করোনার নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্ট দেয়া হয়। এছাড়া রোগীদের কোন সেবা প্রদান করা হচ্ছে না। অপরদিকে সরকারী হসপিটালে রামগঞ্জ আসনের সাংসদ আনোয়ার খাঁনের দেয়া অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাচ্ছে না রোগীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন মানিক জানান, গত এক সপ্তাহে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার নমুনা দিয়েছেন ৬শ, তার মধ্যে প্রায় ৩৭০জন ব্যক্তির করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই জ¦র সর্দি কাশি ও ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসছেন, নমুনা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ৪০জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। আর করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগই নারী।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রওশন জামিল জানান, আমরা রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ১০জনকে একত্রে চিকিৎসা প্রদান করে আসছি। আর রোগীর প্রচ- চাপে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। যাদের অক্সিজেন লিমিট অনেক কম তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্রে প্রেরণ করা হচ্ছে।